বিশেষ প্রতিবেদন :
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে সাম্প্রতিক আন্দোলনে দেওয়া কিছু স্লোগান এবং জাতীয় সংগীত থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টার ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক চলছে। এর জবাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, তাদের কোনো সদস্য এই জনপদের মানুষের সংগ্রাম ও ইতিহাসবিরোধী কোনো স্লোগান দেননি।
আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেছে এনসিপি। একই সঙ্গে দলটি আশা করে, যারা ১৯৭১ সালে এই জনপদের মানুষের জনযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, তারা জাতির সমানে তাদের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করবে।
‘সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিতর্কে এনসিপির অবস্থান’ শিরোনামে দলের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তিটি পাঠিয়েছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করা এবং জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র জারি করার দাবিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-মত-পক্ষ এবং সাধারণ ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করলেও একটি পক্ষ সচেতনভাবে দলীয় স্লোগান এবং বাংলাদেশের জনগণের ঐতিহাসিক সংগ্রামবিরোধী স্লোগান দিয়েছে, যা জুলাই–পরবর্তী সময়ে সাম্প্রতিক আন্দোলনে জাতীয় ঐক্য নবায়নের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে।’
এনসিপি বলেছে, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, এনসিপির কোনো সদস্য সাম্প্রতিক আন্দোলনে দলীয় স্লোগান কিংবা এই জনপদের মানুষের সংগ্রাম ও ইতিহাসবিরোধী কোনো স্লোগান দেয়নি। ফলে যেসব আপত্তিকর স্লোগান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, তার দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পক্ষকেই বহন করতে হবে। এনসিপিকে এর সঙ্গে জড়ানো সম্পূর্ণ অহেতুক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। বরং এনসিপি সদস্যদের বক্তৃতা ও স্লোগানে এই জনপদের মানুষের ঐতিহাসিক সংগ্রামের অধ্যায়গুলো তথা ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের প্রতিফলন ছিল। আমরা আরও লক্ষ করেছি, আন্দোলনকারীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশনার সময় একটি পক্ষ আপত্তি জানালেও তাঁরা দৃঢ়তার সঙ্গে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন।’
বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহাসিক সংগ্রামের অধ্যায় তথা ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের যথাযথ স্বীকৃতি এবং মর্যাদা বাংলাদেশে রাজনীতি করার পূর্বশর্ত বলে এনসিপি মনে করে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘যারা ১৯৭১ সালে এই জনপদের মানুষের জনযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে, আমরা চাই তারা নিজেদের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান জাতির সামনে ব্যাখ্যা করে জাতীয় সমঝোতা ও ঐক্যকে সুদৃঢ় করবে এবং চব্বিশের অভ্যুত্থানের জন–আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নে সহযোগী হবে।’
এনসিপি বলেছে, বিগত ফ্যাসিবাদী জমানায় নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বাংলাদেশের নাগরিকদের পক্ষে চব্বিশের অভ্যুত্থানে যাঁরা ভূমিকা পালন করেছেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাঁদের আবশ্যিকভাবে ‘বাংলাদেশপন্থী’ ভূমিকা পালন করে যেতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এনসিপি মনে করে, বাংলাদেশের জনগণের মধ্যকার বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমেই কেবল মুজিববাদকে সামগ্রিকভাবে পরাস্ত করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের জনগণের সুন্দর ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য সব পক্ষকে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়েছে এনসিপি।
Leave a Reply