বিশেষ প্রতিবেদন :
দেশটির হোম ফ্রন্ট কমান্ড, যারা এর আগে আশ্রয়কেন্দ্র সংক্রান্ত সতর্কতা জারি করেছিলো, তারা জনগণকে জানিয়েছে যে এখন আর কারোর আশ্রয়কেন্দ্রের কাছে অবস্থান করার প্রয়োজন নেই।
তবে একইসঙ্গে সকলকে সতর্ক ও সজাগ থাকার কথাও বলা হয়েছে।
তেহরানে হামলার জবাবে ইরানও ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালাতে পারে— এমন আশঙ্কা থেকে জেরুজালেমের সুপারশপগুলোয় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে খাদ্য ও পানি। মজুত করার জন্য মানুষ এখন এগুলো হুমড়ি খেয়ে কিনছে।
গত রাত ৩টার দিকে সাইরেনের শব্দ ও মোবাইলের সতর্কবার্তায় ঘুম ভাঙে ইসরায়েলের জনগণের।
দেশটির সরকারের তরফ থেকে মানুষকে জানানো হয়, তাদের সামনে একটি “গুরুতর হুমকি” রয়েছে। তাই, সবাই যেন আশ্রয়কেন্দ্রের কাছাকাছি স্থানে অবস্থান করে।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা বিভাগ জানিয়েছে, সারা দেশে রক্ত সংগ্রহের কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে এবং যেসব রোগী বাড়ি ফিরে যাওয়ার মতো কিছুটা সুস্থ, তাদেরকে ছেড়ে দিচ্ছে ইসরায়েলের হাসপাতালগুলো।
অন্যদিকে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পশ্চিম তীরে সব ফিলিস্তিনি শহরে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
এইসব প্রস্তুতির মূল কারণ পাল্টা হামলার আশঙ্কা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইরান থেকে প্রায় ১০০টি ড্রোন ইতোমধ্যে ইসরায়েলের দিকে রওনা হয়েছে।
তেহরানে একাধিক ইসরায়েলি হামলার পর ইরান সরকারিভাবে তাদের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে।
এই হামলার প্রভাব পড়েছে প্রতিবেশী দেশ ইরাকেও। কাতার এয়ারপোর্টের ফ্লাইট ইনফরমেশন বোর্ডে দেখা যাচ্ছে, ইরানের পাশাপাশি ইরাকগামী ফ্লাইটগুলো একের পর এক বাতিল হচ্ছে।
নিরাপত্তাজনিত কারণে বিভিন্ন এয়ারলাইনস ইরাকের আকাশপথও এড়িয়ে চলতে শুরু করেছে।
কারণ, ইরানের প্রতি অনুগত, এমন ইরাকি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বারবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে যে, ইরানে যদি মার্কিন বা ইসরায়েলি হামলা হয়, তাহলে মার্কিন ঘাঁটিগুলো, বিশেষত ইরাকের, “বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।”
গতকাল সন্ধ্যায় আমি ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির একজন উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি।
তিনি জানান, ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ইরাক সরকার টানা আলোচনা চালাচ্ছে, যাতে ইরানের ওপর হামলা হলে ঐ গোষ্ঠীগুলো কোনো পাল্টা প্রতিক্রিয়া না দেখায় । কারণ, ইরাক কোনো নতুন যুদ্ধে জড়াতে চায় না।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর আরেকজন ফরেন পলিসি বিষয়ক উপদেষ্টা এর আগে আমাকে সতর্ক করে বলেছিলেন– ইরানে যদি এবার কিছু ঘটে, তাহলে তা এমন কিছু হবে যা আমরা আগে দেখিনি।
তিনি ঠিকই বলেছিলেন। এর আগে ইরান ও ইসরায়েলের মাঝে পাল্টাপাল্টি হামলা দেখা গেলেও ইরানের মাটিতে এমন সরাসরি সামরিক অভিযান ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর এবারই প্রথম।
ইরানে ইসরায়েলি হামলার এই সময়টিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মাত্র দুইদিন বাদেই আগামী রোববার ওমানের মাস্কটে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ দফা আলোচনা হওয়ার কথা ছিলো।
আমি নিজেও ওই অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন সবকিছু অনিশ্চিত। এই আলোচনা আদৌ এখন আর হবে কিনা, তা অজানা। আর তার থেকেও বেশি অজানা বিষয় হলো মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ।
ইরানের পাশাপাশি ইরাকগামী ফ্লাইটগুলোও বাতিল হচ্ছে
ছবির ক্যাপশান,ইরানের পাশাপাশি ইরাকগামী ফ্লাইটগুলোও বাতিল হচ্ছে
ইসরায়েলের হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনী, রেভল্যুশনারি গার্ড এবং ইমার্জেন্সি কমান্ডের কমান্ডার নিহত হওয়ার কথাও জানান তিনি।
ওই হামলার পরপরই পাল্টা হামলার শঙ্কায় নিজ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে ইসরায়েলি সরকার।
Leave a Reply